হীরামন্ডি রিভিউ




মুক্তির কয়েকদিন আগে থেকেই সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে সঞ্জয় লীলা ভানসালীর নতুন ওয়েব সিরিজ হীরামন্ডি নিয়ে। মুক্তি পেয়েছে গত সপ্তাহে। সঞ্জয়ের হাত ধরেই প্রথম ওয়েব দুনিয়ায় ডেবিউ করলেন সোনাক্ষী সিনহা। আর এই সিরিজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে আছেন মনীষা কোয়িরালা।

মুক্তির আগে শোনা যাচ্ছিল, রাজকোষ থেকে লুট করে নিজের প্রাসাদ সাজানো তাওয়াইফদের জীবন নিয়ে হীরামন্ডি। কিন্তু আমি তো প্রথম পর্ব দেখেই হতাশ হয়ে ফেললাম। প্রায় ৫০ মিনিটের প্রথম পর্বে মূল কাহিনি ছিলই না।

কাহিনির মূল পাত্র দুজন। এক জন দুর্লাল সিং (ফারাহ খান) আর আরেক জন চন্দন সেন (ঋশিতা ভট্ট)। দুর্লাল সিং ১৯৪৭ এর দেশ ভাগের সময় এক হিন্দু রাজকন্যাকে বাঁচায় রায়োটারা থেকে। তারপর সেই রাজকন্যা ইন্দিরা (গীতিকা টিয়াওয়ান) দুর্লালের সঙ্গে তার বাড়িতে চলে আসে। আবার চন্দন সেন এক নবাব ঘরানার মেয়ে। তার স্বামী নবাব মিয়াঁজী সাহেবের (অনিল জয়পুরী) সঙ্গে তার সংসার ভালোই চলছিল। কিন্তু নবাব সাহেব অকাল মৃত্যুর পর তার জীবন নিয়েই সব সমস্যা শুরু হয়।

এবার দুর্লাল সিং যে রাজকন্যাকে বাঁচায় তিনিও এক সময় ২০০ কোটি টাকার মালিক হয়ে যান। কিন্তু একটা দিন সেই রাজকন্যার সব সম্বল জলদস্যুরা লুট করে নিয়ে যায়। পরে শোনা যায় যে জলদস্যুদের সর্দার হচ্ছে দুর্লাল সিংয়ের ভাই।

আবার চন্দন সেন যার স্বামী মারা গেল তার শ্বশুরবাড়ির লোক তার সব সম্পত্তি হাতিয়ে নিয়ে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। এবার তিনি আশ্রয় নিলেন দুর্লাল সিংয়ের সেই বাড়িতে। আর এইভাবেই শুরু হলো হীরামন্ডি। দুর্লাল সিংয়ের বাড়িতে যে নারীরা আশ্রয় নিয়ে বাস করছেন তাদের বেশিরভাগই তাওয়াইফ। আর এই নারীদেরকে নিয়ে একটা ব্যবসা শুরু করার চেষ্টা করছেন দুর্লাল সিং।

সবচেয়ে বড় অবাক হওয়ার বিষয় হলো প্রথম পর্বের বেশির ভাগই সময় একে অপরের সঙ্গে ঝগড়া আর দাঙ্গা দিয়েই কাটিয়েছে সঞ্জয়। দুর্লাল সিংয়ের সঙ্গে তার বড় ভাই, চন্দন সেনের সঙ্গে তার শ্বশুরবাড়ির লোকের ঝগড়া আর দাঙ্গা দেখে দেখে আমার বুঝতেই কষ্ট হচ্ছিল এটা তো তাওয়াইফদের জীবনের গল্প।

সঞ্জয় লীলা ভানসালীকে নিয়ে আমার একটা ধারণা আছে যে তিনি চলচ্চিত্রের একজন যাদুকর। যেকোনো গল্পকে সুতো আঁটার মতো করে বলতে পারেন। কিন্তু হীরামন্ডিতে একেবারেই তেমনটা মনে হলো না।

প্রথম পর্বে সঞ্জয়ের ডিরেকশনে বেশকিছু ভুলচুক দেখা গেছে। সবচেয়ে বড় একটা ভুলচুক হলো দুর্লাল সিংয়ের ছোট ভাই ঠিক কেন রাজকন্যাকে লুট করলো সেটা দেখানো হয়নি। তারপর দেশ ভাগের সময় রায়োটের সময় কেন হিন্দু আর মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে দাঙ্গা হলো সেটাও দেখানো হলো না।

আবার চন্দন সেনের ওপর তার শ্বশুরবাড়ির লোক দাঙ্গা কিভাবে করলো সেটাও দেখানো হলো না। সবচেয়ে বড় ভুল হলো একবারও দেখানো হলো না দুর্লাল সিংয়ের বাড়িতে থাকা মেয়েগুলো তাওয়াইফ। তাদের ব্যবসা কি? তাদের আদৌ কোনো ব্যবসা আছে কিনা? কিছুই দেখানো হলো না।

সঞ্জয় লীলা ভানসালী যখন হীরামন্ডির কাজ শুরু করেছিলেন তখন তিনি বলেছিলেন যে তিনি তাওয়াইফদের জীবনের আসল গল্প বলতে চান। কিন্তু প্রথম পর্ব দেখে তা তো মনে হলো না। একটা ঝগড়া, দাঙ্গার গল্পই এখন পর্যন্ত দেখা গেছে। তাওয়ায়েফদের জীবনের আসল গল্প কি? সেটা বোঝার জন্য এখনও অপেক্ষা করতে হবে।