হামিদা বানো




আমি পথে যখন পথ হারাই, খুঁজি অভিভাবক হাতটা চেপে ধরার মতো কাউকে। অনেক ভিড়, অনেকজনের মুখ চেনা, কিন্তু এতো জনতার মধ্যে হাত চেপে ধরার মতো সেই শক্ত হাতটা খুঁজে পাই না আর। আজকে বৃষ্টি নামছে, বৃষ্টি ভেজা আমার চোখ। ভিড়ের ভিতর দিয়ে এগিয়ে যাই। কিন্তু কোথায় যাবো, কোন দিকে যাবো বুঝে উঠতে পারছি না। কীভাবে নষ্ট হয়ে গিয়েছি আমি! কী আর বলবো এখন! কীভাবে ধ্বংস হয়ে গিয়েছি। কীভাবে অপমানিত হয়েছি, কীভাবে লাঞ্ছিত হয়েছি। এই নিয়ে আর কি বলবো, সবাই জানে এখন।

এক জীবনের কতটা দাম হতে পারে তা আমি জানি না। এতো বড় ক্ষতির পর দাম নির্ধারণ করাও সম্ভব না। আমার জীবনটা ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে, ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে আমার সম্মান। রাতের অন্ধকারে এক প্রদীপ জ্বলছিল, সেটাও নিভিয়ে দেওয়া হয়েছে। কে জ্বালিয়ে দিয়েছে, কারা নিভিয়ে দিয়েছে। ওই প্রদীপ নিভিয়ে দিয়েছে এমন লোকদের বিচার করবেন আল্লাহ।

আমি তখন বছর পাঁচেকের মতো ছিলাম। বাবা আমাকে ভীষণ ভালোবাসতেন। আমার খেলা দেখলেই মন ভরে যেত। মাঝে মাঝে আমার জন্য ছোট ছোট আঁটির প্রতিযোগিতার আয়োজন করতেন বাড়িতেই। গাছে চড়তে আমার কতো আনন্দ হতো তা বলে শেষ করা যাবে না। সেইসময়গুলি আমার কাছে ছিল স্বর্গের মতো। কিন্তু সেই সুখের দিনগুলি সেই সুন্দর দিনগুলি শেষ হয়ে গিয়েছে যখন একদিন বাবা চলে গেলেন।

  • আমার বাবার মৃত্যুর পর আমাদের ওপর দুর্দিন নেমে এলো।
  • মা ঘরে ঘরে কাজকর্ম করে আমাদের লালন-পালন করলেন।
  • বড় হওয়ার পর আমি ঘরের কাজকর্মকে সামলালাম।

অনেক বেপরোয়া উল্লাসের মধ্যেও অনেক কষ্টের কথা মনে পড়ে যায়। খুব বেশি কিছু কষ্ট আমার উপর এসেছে। ভগবানের উপর রাগ হয় কেন আমার উপর এতো কষ্ট এলো। আবার ভাবি এতো কষ্টের পর আমার জীবনটা কী আর খুশিতে ভরবে না।

কী আর হবে, যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। এখন হতাশ হয়ে কি লাভ! এখন সময় এসেছে মুখেঁর দিকে তাকাবার। আমি জানি আমার জীবনটা কতোটা মূল্যবান। আমি আবার ঘুরে দাঁড়াবো। আল্লাহর সাহায্য নেবো। আমার মনে হয়, ভগবান মানুষকে এতো কষ্ট দেওয়ার জন্য তৈরি করেননি। ভগবান আমাদের জন্য অনেক সুন্দর জিনিস রেখেছেন। আমরা কষ্ট পেলে ভগবানও কষ্ট পান। আমরা হতাশ হলে ভগবানও হতাশ হন।

আজ আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন দিন। আমি চেষ্টা করছি নিজেকে সামলে নেওয়ার। আমি জানি আমি পারবো। আমার আল্লাহর উপর ভরসা আছে। তিনি আমাকে সাহায্য করবেন।