পুন্ছ




আমার নিজের প্রিয় পাহাড়ি নিবাস পুন্ছের গল্প আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করার অনেক আগেই হয়েছে। শহরের হৈ চৈ থেকে দূরে, পাহাড়ের কোলে অবস্থিত এই ছোট্ট শহরটি আমার মনের কাছে অত্যন্ত প্রিয়।
আমার বাবার সামরিক কর্মক্ষেত্রের কারণে আমাদের শৈশবের বেশিরভাগ সময় কেটেছে এই শান্তিপূর্ণ শহরে। সবুজ পাহাড়, স্বচ্ছ নদী এবং মায়াময় আকাশ আমাদের প্রতিটি দিনকে একটি স্বর্গীয় স্বাদের দিয়েছে। গ্রীষ্মের উষ্ণতায় যখন পাহাড়ের গায়ে রক্তবর্ণ রোদোডেনড্রন ফুটত, তখন পুরো শহরটি যেন এক বিশাল গোলাপের বাগান হয়ে যেত। আর বর্ষার জলের স্রোত যখন শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হতো, তখন পাহাড়ের সবুজ শাড়ির উপর যেন হাজারটা রূপালী ছড়ি নেচে বেড়াতো।
শীতকালের প্রত্যুষে পাহাড়ের চূড়াগুলো যখন তুষারের চাদরে মোড়া যেত, তখন পুন্ছ হয়ে উঠত এক অপরূপ শীতল স্বর্গ। ঠান্ডা বাতাসে ডানা মেলে নেচে বেড়াতো লালগলা খঞ্জন পাখিগুলো, আর চারপাশ ঘিরে থাকত অপূর্ব নৈশব্দের শান্তি। এই সময়টাতে আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা গড়িয়ে বেড়াতাম বরফে ঢাকা পাহাড়গুলোর উপর, তৈরি করতাম বরফের মানুষ এবং উপভোগ করতাম শীতকালের অপরূপ সৌন্দর্যকে।
পুন্ছের মানুষগুলোর মধ্যেও রয়েছে অনন্য একটা গরমজোশভাব। সদা হাসিখুশি, সাদাসিধা এবং অতিথিপরায়ণ, তারা সবসময়ই আমাদেরকে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন খোলা হৃদয়ে। স্থানীয় বাজারের রঙবেরঙের দোকানগুলো, সুস্বাদু স্থানীয় খাবার এবং ব্যাটলু নদীর তীরে রাতে আয়োজিত মেলাগুলো এখনও আমার মনে জাগ্রত করে গভীর স্মৃতির রেশ।
একটি সামরিক শহর হওয়ার কারণে, পুন্ছের সাথে সবসময়ই একটা জাতীয়তাবাদী আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। সীমান্তের কাছে অবস্থিত হওয়ার কারণে, এটি ভারতের প্রহরীদ্বার হিসেবে পরিচিত। শহরের বিভিন্ন স্মৃতিস্তম্ভ এবং যুদ্ধ-স্মৃতিসৌধগুলো সাহসী সেনাদের দেশভক্তির এবং দেশের জন্য তাদের ত্যাগের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
আজ, পুন্ছ একটি প্রগতিশীল শহরে পরিণত হয়েছে, যা তবুও তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে। এটি পর্যটকদের জন্য একটি জনপ্রিয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে, যারা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ, মনোরম দৃশ্য এবং স্থানীয় সংস্কৃতির স্বাদ নিতে চায়। পাহাড়ে আরোহণ, ট্র্যাকিং এবং ক্যাম্পিংয়ের সুযোগ সহ, পুন্ছ প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য একটি স্বর্গ।
আমার জন্য, পুন্ছ সবসময়ই আমার বাড়ির মতো থাকবে। এর প্রতিটি পাহাড়, প্রতিটি নদী এবং প্রতিটি রাস্তার সাথে আমার জড়িয়ে আছে গভীর স্মৃতির বন্ধন। এমন একটি শহর যেটি কেবলমাত্র আমার জন্মস্থান নয়, বরং আমার হৃদয়ের অংশ।
আপনাদের অনুরোধ, যদি কখনও পুন্ছ ভ্রমণ করার সুযোগ পান, তাহলে অবশ্যই ঘুরে আসবেন এই নিরিবিলি স্বর্গ থেকে। আমি নিশ্চিত, আপনার মনও এই শহরের মায়ায় আটকে যাবে, ঠিক যেমন আমার হয়েছিল।