গোপাল কৃষ্ণ গোস্বামী




আমার প্রিয় বন্ধুরা, আজ আমি তোমাদের সামনে তুলে ধরবো একজন মহাপুরুষের জীবন গাথা। তিনি যিনি নিজে ঈশ্বরের আনন্দরূপ এবং সেই সাথে শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ দেবের প্রিয় ছাত্র। তিনি হলেন গোপাল কৃষ্ণ গোস্বামী।
একদিন কলকাতায় একটি মন্দিরের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে গিয়েছিলাম। আচার্য মহারাজ সেদিন উপস্থিত ছিলেন বলে অপেক্ষায় ছিলাম তাঁকে দর্শন করার। অপেক্ষা করতে করতে সভামণ্ডপে ঢুকলেন আর এক উজ্জ্বল পুরুষ। বয়স প্রায় ষাটের কোঠায়, কিন্তু চেহারায় তেজ যেন কুড়ি বছরের যুবকের মতো। তিনি হাঁটার সময় অল্প একটু বাঁকা হয়ে হাঁটছিলেন। কপালে সাদা চন্দন তিলক, চোঙা দাড়ি, দুই চোখে অপূর্ব আলো। আপন মনে মনে ভাবছিলাম, আচার্য মহারাজের চাইতেও বেশি তেজস্বী ব্যক্তি মনে হচ্ছে তো তাঁকে। কিছুক্ষণ পরেই জানলাম তাঁর পরিচয়। তিনিই স্বয়ং গোপাল কৃষ্ণ গোস্বামী মহারাজ।
আমার সৌভাগ্য, সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন শ্রীম শ্রীমতি স্বামীজী মহারাজও। দুই মহাপুরুষকে একসঙ্গে দেখে আমার মন আনন্দে ভরে গেলো। তাঁদের কথা শোনা আর তাঁদের ভক্তিভাব দেখা অন্যরকমই এক অভিজ্ঞতা। তাঁরা কেমন নিরহংকার, সেটা দেখার মতো। দুই মহাপুরুষই একসময় একসঙ্গে বসে প্রসাদ গ্রহণ করছিলেন। হঠাৎ গোপাল কৃষ্ণ গোস্বামী মহারাজ শ্রীম শ্রীমতি স্বামীজী মহারাজের পাতে প্রসাদ তুলে দিলেন।
শ্রীম শ্রীমতি স্বামীজী মহারাজ বললেন, "আপনি আমাকে খাওয়াচ্ছেন কেন? আমি তো ছোট। আপনিই বড়।"
গোপাল কৃষ্ণ গোস্বামী মহারাজ হাসলেন। "আমি বড় নই, বয়স বেশি।"
এরপর শ্রীম শ্রীমতি স্বামীজী মহারাজ গোপাল কৃষ্ণ গোস্বামী মহারাজের পাতে প্রসাদ তুলে দিলেন। এরই মধ্যে প্রচুর ভক্ত তাঁদের ঘিরে দাঁড়িয়ে।
গোপাল কৃষ্ণ গোস্বামী মহারাজ হঠাৎ প্রশ্ন করলেন, "তুমি কার কি?"
একজন বিদেশী ভক্ত তাঁকে বললেন, "আমি আপনারই।"
গোপাল কৃষ্ণ গোস্বামী মহারাজ হাসলেন। "না, না। তুমি তো আজও ঘুরে বেড়াচ্ছ। তুমি কারো নও। তোমার জন্ম কার সঙ্গে হওয়া উচিত, তা এখনো হয়নি।"
বিদেশী ভক্তটি বললেন, "না, না। আমি আপনারই।"
গোপাল কৃষ্ণ গোস্বামী মহারাজ আবার বললেন, "না, না। তুমি কাউকে পেয়েছিলে না। কিন্তু সে তোমাকে ছেড়ে চলে গেছে। তাই তুমি আবার একা হয়ে গেছ।"
বিদেশী ভক্তটি কেঁদে ফেলল।
গোপাল কৃষ্ণ গোস্বামী মহারাজ বুঝলেন, ছেলেটি মনের ভেতরে কষ্ট পাচ্ছে। তিনি তাকে সান্ত্বনা দিতে লাগলেন।
"তুমি কাঁদো না। তুমি এখনো খুব তরুণ। তুমি কাউকে পাবে। তুমি তোমার গুরুকে পেয়েছ। তাঁর কথা শোনো, সাধন করো। তুমি সবকিছুই পাবে।"
বিদেশী ভক্তটি সান্ত্বনা পেলেন। তাঁর কান্না থামল।
গোপাল কৃষ্ণ গোস্বামী মহারাজ ছিলেন এক অপূর্ব সংগীতজ্ঞও। তিনি কী অসাধারণভাবে বাঁশি বাজাতেন! একবার তো গোটা দুই ঘণ্টা ধরে তাঁকে বাঁশি বাজাতে শুনেছি। যেন কানে মধুরাস বাজছে।
তিনি ছিলেন এক অসাধারণ কবিও। তাঁর কবিতাগুলো অনন্য। তিনি লিখেছিলেন,
"পূর্ণচন্দ্রের জ্যোতি যেমন,
স্বাধীন খ্যাতি নির্মল মনে,
তবেই আত্মা হয় উজ্জ্বল,
জগতে রাখে অমর কীর্তন।"
গোপাল কৃষ্ণ গোস্বামী মহারাজ ছিলেন এক সত্যিকারের মহাপুরুষ। তাঁর জীবন ছিল অসাধারণ, তাঁর শিক্ষা ছিল এক অমূল্য সম্পদ। আমরা চিরকালই অনুপ্রাণিত হব তাঁর মতো মহৎ ব্যক্তিত্ব দেখে।
আমার বন্ধুরা, তোমরা কী কখনো গোপাল কৃষ্ণ গোস্বামী মহারাজ সম্পর্কে শুনেছো? তাঁর জীবন ও শিক্ষা সম্পর্কে তোমাদের কী মত? তোমাদের মন্তব্য জানাতে ভুলো না।