কচ্ছপিঠা দ্বীপ: এক জটিল সীমানা বিরোধের গল্প




একটি ছোট্ট দ্বীপ, বড় রাজনৈতিক তুমুল

বঙ্গোপসাগরে ভারত এবং শ্রীলঙ্কার উপকূলের কাছাকাছি অবস্থিত কচ্ছপিঠা দ্বীপ, শুধুমাত্র 2.4 বর্গকিলোমিটার আয়তনের একটি অল্প উপযোগী জমি। কিন্তু এই ছোট্ট ভূখণ্ড দুই দেশের মধ্যে একটি দীর্ঘস্থায়ী সীমানা বিরোধের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে, যা আজ পর্যন্ত অমীমাংসিত রয়েছে।

ইতিহাসের মধ্যে ডুব দেওয়া

কচ্ছপিঠা দ্বীপের ইতিহাস জটিল এবং বিতর্কিত। 17 শতকে ডাচদের দ্বারা এই দ্বীপটি প্রথম দখল করা হয়েছিল, যারা সেখানে একটি দুর্গ নির্মাণ করেছিল। পরবর্তীতে, ব্রিটিশরা এই দ্বীপটি দখল করে নেয় এবং এটিকে তাদের মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির অংশ হিসাবে শাসন করে।

1947 সালে ভারত স্বাধীনতা লাভের পর, কচ্ছপিঠা দ্বীপটিকে ভারতের অংশ বলে দাবি করা হয়েছিল। তবে, শ্রীলঙ্কাও এই দ্বীপের দাবি করেছিল, যুক্তি দেখিয়েছিল যে এটি ঐতিহাসিকভাবে শ্রীলঙ্কার মৎস্যজীবীদের দ্বারা ব্যবহৃত হয়েছে।

বিরোধের আগুনে ঘি ঢালা

সীমানা বিরোধটি আরও জটিল হয়ে ওঠে 1974 সালে, যখন ভারত এবং শ্রীলঙ্কা সামুদ্রিক সীমা চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তি অনুসারে, কচ্ছপিঠা দ্বীপটি ভারতের অর্থনৈতিক একচেটিয়া অঞ্চলের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল, তবে শ্রীলঙ্কার মৎস্যজীবীদের ঐতিহ্যবাহী মৎস্য ব্যবসাকে রক্ষা করা হয়েছিল।

তবে, এই চুক্তি শ্রীলঙ্কার জাতীয়তাবাদীদের কাছ থেকে ব্যাপক বিরোধের মুখোমুখি হয়েছিল, যারা যুক্তি দিয়েছিল যে এটি দেশের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে। এই বিরোধের ফলে সহিংসতা ও সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়েছিল, কারণ শ্রীলঙ্কার মৎস্যজীবীরা ভারতীয় নৌবাহিনীর কাছ থেকে হয়রানির অভিযোগ এনেছিল।

চলমান সমস্যা

বছরের পর বছর ধরে, কচ্ছপিঠা দ্বীপের বিরোধটি অমীমাংসিত রয়েছে। দুই দেশ তাদের দাবি জোরদার করতে অব্যাহত রেখেছে, কিন্তু একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান এখনও অধরাই রয়ে গেছে।

এই বিরোধের প্রভাব শুধুমাত্র দুই দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি দক্ষিণ এশিয়ার সামগ্রিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য একটি হুমকি হিসাবে দেখা হচ্ছে। যদি এই বিরোধটি মীমাংসা না করা হয়, তবে অঞ্চলটিতে আরও সংঘাতের ঝুঁকি বেড়ে যাবে।

পরিশেষে

কচ্ছপিঠা দ্বীপের সীমানা বিরোধ একটি জটিল এবং দীর্ঘস্থায়ী ইস্যু, যা দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা ও অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। যদিও একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান এখনও দূরবর্তী বলে মনে হচ্ছে, তবে এটি প্রত্যাশা করা যায় যে দুই দেশ আলোচনা এবং কূটনীতির মাধ্যমে এই বিষয়টি মীমাংসা করার চেষ্টা চালিয়ে যাবে। কচ্ছপিঠা দ্বীপের ভবিষ্যৎ কী হবে তা সময়ই বলে দেবে, কিন্তু এটি নিশ্চিত যে এই দ্বীপটি দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক ল্যান্ডস্কেপে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অব্যাহত রাখবে।