আলমগীর আলম ও তাঁর লেখালেখি




আমার লেখালেখির শুরু আসলে অনেক দিন আগে। যদিও প্রকাশনার জগতে পা রাখা কিংবা জনসমক্ষে শেয়ার করা জিনিসটা একেবারেই ইদানিংকার ঘটনা। প্রথমে তো স্কুলে পড়ার সময় ছোট ছোট গল্প, কবিতা লিখতাম। কখনো নিজের খাতায়, আবার কখনো বা বন্ধুদের খাতায়। পরে ক্লাসের পত্রিকায় লিখতাম। কিন্তু প্রকাশনার কথাটা মাথায় আসেনি কখনোই। লেখার শখ ছিল বটে, কিন্তু তাকে বাণিজ্যিক কোনো কাজে লাগানোর কথা কখনো ভাবিনি।
এরপরে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি তখন ক্যাম্পাসের পত্রিকায় নিয়মিত লিখা শুরু করি। সেখানেই প্রথম দিকে কিছু কবিতা ছাপা হয়। পরে একটি জাতীয় দৈনিকে কবিতা পাঠিয়েছিলাম। সেখানেও ছাপা হয়। তবে সেটা ছিল খুব অল্প সময়ের ব্যাপার। কারণ দৈনিকে লেখা বলতে গেলে অনেকটা সাংবাদিকতার মতোই একটা বিষয়। আর আমার লেখার ধরন কিংবা আগ্রহের সাথে মিলতো না।
সেই সময় থেকেই মনে মনে ঠিক করলাম, এমন কিছু লিখবো যা মানুষ পড়ে আনন্দ পাবে, নিজের জীবনের সাথে মিল খুঁজে পাবে। এবং সেটা করার জন্য যে প্রকাশনা জগতের দরজায় পা রাখতে হবে তাও বুঝে গেলাম। কিন্তু প্রকাশনার আরেকটা দিক আছে আর সেটা হচ্ছে খরচ। বই প্রকাশ করার জন্য অনেক টাকা লাগে। আর আমার সেই সময় এতো টাকা ছিলো না যেটা দিয়ে বই প্রকাশ করতে পারবো।
তাই এরপরে কিছুদিন সাহিত্যের দিক থেকে দূরে সরে থাকলাম। তবে লেখার আগ্রহটা কখনোই মরেনি। আমার কোনো ভাবনা কিংবা ঘটনা মনে এলেই খাতায় লিখে ফেলতাম। এইভাবেই সময় কেটে গেল। এরপরেই একদিন আমি একটি অনলাইন বই প্রতিযোগিতার খবর পেলাম। সেখানে একটা শর্ত ছিলো যে, বইটার অবশ্যই অন্তত একটা অংশ পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে। এ সময়টায় আমার কয়েকটা গল্পের একটি খসড়া তৈরি ছিলো। আমি সেগুলোর কিছু অংশ উন্মুক্ত করে প্রতিযোগিতায় অংশ নিলাম। আর আশ্চর্যজনকভাবে বইটা প্রথম পুরস্কার পেয়ে গেলো।
পুরস্কার পাবার পরে আমার অনেক আত্মবিশ্বাস বাড়লো। মনে হলো, এবার হয়তো বইটা ছাপানোর সময় এসেছে। এবং আমি সেই কাজটা করলামও। বইটা ছাপানো হলো, বইমেলায় বিক্রি হলো এবং পাঠকদের কাছেও প্রশংসা পেলাম। আর সেই সাথে আমার মনের মধ্যে লেখার জন্য একটা আগুন জ্বলে উঠলো। লেখা চালিয়ে যাওয়ার জন্য একটা তীব্র জেদ তৈরি হলো।
ওই বইটার পর থেকে এ পর্যন্ত অনেক বই লিখেছি। সব বইয়েরই গল্প আলাদা, চরিত্র আলাদা। কিন্তু সব বইয়ের মূল বিষয়বস্তু একটাই। আর সেটা হচ্ছে ‘মানুষ’। আমার লেখায় মানুষের আবেগ, অনুভূতি, স্বপ্ন, ভালোবাসা, হতাশা আর জীবনের নানান চ্যালেঞ্জের কথা থাকে। কারণ আমি বিশ্বাস করি, মানুষ সবচেয়ে জটিল এবং আকর্ষণীয় জীব। আর তাদের গল্প বলার অনেক কিছু আছে।
আমি আমার লেখালেখি চালিয়ে যাচ্ছি। নতুন নতুন গল্প লিখছি। এবং আশা করছি, আমার লেখা মানুষকে আনন্দ দেবে, তাদের ভাবনায় উদ্রেক করবে এবং তাদের জীবনের সাথে মিল খুঁজে পাওয়ার সুযোগ দেবে।