আত্মকথন থেকে আত্মহত্যার দ্বারপ্রান্তে




আমি একজন সাধারণ হিন্দু পরিবারের মেয়ে। আমার বাবা-মা দুজনেই সরকারি চাকরি করেন। আমার এক বড় বোন এবং এক ছোট ভাই আছে। আমাদের পরিবার খুব সুখী ছিল।
আমি স্কুলে খুব ভালো ছাত্রী ছিলাম। সব বিষয়েই আমার ভালো রেজাল্ট থাকত। আমি নাচ, গান, অভিনয় সবই খুব ভালো করতে পারতাম। আমার বন্ধুরা আমাকে খুব ভালোবাসত। আমি সবার মন জয় করতে পারতাম।
কিন্তু আমার জীবন পাল্টে গেল একদিন। আমি যখন ক্লাস নাইনে পড়ছিলাম, তখন আমাদের স্কুলে এক নতুন ছেলে ভর্তি হল। তার নাম ছিল রাজ। রাজ খুব স্মার্ট এবং মেধাবী ছিল। সে প্রথম দিন থেকেই আমার প্রতি আকৃষ্ট হয়। আমিও তাকে পছন্দ করতাম।
আমরা দুজনেই ধীরে ধীরে একে অপরের প্রেমে পড়ে গেলাম। আমরা প্রায়ই স্কুলের পরে পার্কে বা সিনেমা হলে দেখা করতাম। আমাদের সম্পর্কের কথা কেউ জানত না।
কিন্তু একদিন আমাদের সম্পর্কের কথা স্কুলের প্রিন্সিপাল জেনে ফেললেন। তিনি আমাদের ডেকে তলব করলেন এবং আমাদের সম্পর্কের জন্য বকা দিলেন। তিনি বললেন, আমরা দুজনেই মুসলিম এবং হিন্দু, আমাদের সম্পর্ক সমাজে মেনে নেওয়া হবে না।
আমরা দুজনেই খুব দুঃখ পেলাম। আমরা আমাদের সম্পর্ক ভাঙার কথা ভাবতেও পারছিলাম না। কিন্তু সমাজের চাপের কাছে আমাদের হার মানতে হল।
আমি এবং রাজ আলাদা হয়ে গেলাম। আমি খুব দুঃখ পেতাম। আমার অনেক কষ্ট হত। আমি আর পড়াশোনায় মন দিতে পারতাম না। আমার খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে গেল। আমি খুব দুর্বল হয়ে গেলাম।
আমার বাবা-মা আমার মুখ দেখে আমার অবস্থা বুঝতে পারলেন। তারা আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলেন। ডাক্তার আমাকে ডিপ্রেশনের রোগী বলে জানালেন।
আমি ডাক্তারের দেওয়া ওষুধ খেলাম। কিন্তু আমার মন ভালো হল না। আমি আর বাঁচতে চাইতাম না। একদিন আমি আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নিলাম।
আমি আমার ঘরের দরজা বন্ধ করে জানালা দিয়ে লাফ দিয়ে পড়ার জন্য প্রস্তুত হলাম। কিন্তু সেই মুহূর্তে আমার বাবা ঘরে ঢুকলেন। তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরলেন এবং বললেন, "মেয়ে, আমি জানি তুমি খুব কষ্ট পাচ্ছো। কিন্তু তুমি আত্মহত্যা করো না। তুমি আমাদের একমাত্র মেয়ে। আমরা তোমাকে খুব ভালোবাসি।"
আমার বাবার কথা শুনে আমার চোখে জল এলো। আমিও তাকে জড়িয়ে ধরলাম। আমি তাকে বললাম, "বাবা, আমি আর বাঁচতে চাই না। আমি রাজ ছাড়া বাঁচতে পারব না।"
আমার বাবা আমাকে বললেন, "মেয়ে, তুমি সবকিছু ভুলে যাও। আমি রাজের সঙ্গে কথা বলব। আমি তাকে বোঝাব। আমি তোমাদের দুজনকে আবার একসঙ্গে করব।"
আমার বাবার কথা শুনে আমার মনে একটু আশার সঞ্চার হল। আমি তাকে বিশ্বাস করলাম।
আমার বাবা রাজের বাড়িতে গেলেন। তিনি রাজের বাবা-মাকে সবকিছু বললেন। রাজের বাবা-মাও খুব ভালো মানুষ। তারাও আমাদের সম্পর্কের জন্য রাজি হলেন।
আমি এবং রাজ আবার একসঙ্গে হলাম। আমরা খুব খুশি ছিলাম। আমাদের পরিবারও খুব খুশি ছিল।
আমাদের জীবন আবার সুন্দর হয়ে গেল। আমরা দুজনেই একসঙ্গে পড়াশোনা করলাম। আমরা দুজনেই ভালো চাকরি পেলাম। আমরা সুখী সংসার জীবন যাপন করছি।
আমাদের জীবন থেকে আমি যে শিক্ষা পেয়েছি তা হল, যতই কষ্ট হোক না কেন, আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়। আমাদের সবকিছুর সমাধান আছে। আমাদের ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে।